মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান :: সন্ধ্যা নামলেই ডাকাতদলের বেপরোয়া ঘুরা-ফেরা। আতঙ্কে থাকেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাতগজ্জা পাড়ার উপজাতিয় চাক সম্প্রদায়ের পরিবারের লোকজন। ভয়ে এখন তারা ঘরছাড়া। পাড়ার রাস্তাঘাট ও বসবাসরত ঘর-বাড়ী এখন ফাঁকা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি- সোনাইছড়ি সড়কে মাঝখানে জুমখোলা এলাকায় ৩০-৩৫জন সাধারণ পথযাত্রীদেরকে গতিরোধ করে টাকা-পয়সা, ব্যবহারের মোবাইলসহ আরও অন্যান্য জিনিস পত্র লুটপাট করে নেয় অস্ত্রধারী ডাকাতদলেরা। এতে যৌথবাহিনীর সাড়াশি অভিযানে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাতগজ্জা চাক পাড়ার আশপাশে আশ্রয় নেয়। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখে উপজাতিয় চাক সম্প্রদায়ের লোকজনেরা আতঙ্কে সেই রাতে সাত পরিবারের ছোট শিশু, বৃদ্ধসহ মহিলাদেরকে অন্যত্রে পাঠিয়ে দিয়ে পুরুষেরা ওইসব ডাকাতদলকে ধাওয়া করে ধরতে চাইলে ডাকাতদল ফাঁকা গুলির আওয়াজ দিয়ে আতঙ্কিত করে পালিয়ে যায়। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই অস্ত্রধারী ডাকাতদলেরা গহীন অরণ্যে ঢুকে পড়ে।
এদিকে ঘরছাড়া মহিলারা সদর ইউনিয়নের মধ্যম চাক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নেয়। এরা হলেন, মংমং চাকের স্ত্রী মাইয়ে চাক, ছাহ্লাথোয়াই চাকের স্ত্রী ইউ চিং চাক, ক্যউহ্লা চিং চাকের স্ত্রী এ মাই চিং চাক, থোয়াইছা প্রু চাকের স্ত্রী মা চা চিং চাক ও চিং থোয়াই চাকের স্ত্রী হ্লনি খাই চাক প্রমূখ।
জানা যায়, সাতগজ্জা পাড়ায় চাক সম্প্রদায় সাতটি পরিবারের বসবাস করে। দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের ঝাঁড়-জঙ্গল আবাদ করে জুম চাষ করে আসছিল ওই সাত পরিবারের পুরুষ-মহিলারা। তবে তারা অস্ত্রধারী একদল যুবক ঘুরাফেরা করতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে ঘরছাড়তে বাধ্য হলেন তারা। যৌথ অভিযানের মাধ্যমে ওই অস্ত্রধারী যুবকদলকে আটকাতে না পারলে পাড়ায় যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান পলিয়ে আসা মহিলারা। তবে তারা আরও জানান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ পরিচালনায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তাতে অবশ্যই আটকে যাবে অস্ত্রধারী যুবকদলটি।
আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে আসা হ্লানি খাই চাক্ এই সাংবাদিককে জানান, গত শুক্রবার সকাল বেলায় আমার স্বামী পালিত গরুর পাল নিয়ে জুম পাহাড়ে যাওয়ার সময় ১০-১৫ অস্ত্রধারী যুবকের কবলে পড়লে সে ভয়ে কাতর হয়ে যায়। তাকে গতিরোধ করে প্রথমে সাথে থাকা মোবাইল নিয়ে ফেলে এবং বলে কোন ধরনের পুলিশ-বিজিবিকে খবর দিলে একেবারে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। পরে মোবাইল দিয়ে দেয়। তবে এখনো মাঝে মধ্যে মোবাইলে হুমকি দিয়ে বলে পুলিশ-বিজিবিকে কেন খবর দিলে। এলাকা ছেড়ে গেছ ভাল করনি। আমাদের পালিত গরুর গুলোর খবরাখবর ও নিতে পারচ্ছিনা। এই ঘটনার পর উপজাতি ও বাঙালীর মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি এলাকাগুলো এখনো পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
ডাকাতদলের আতঙ্কে ঘরছাড়া পরিবারদের ভাল মন্দ খবরাখবর নিতে গিয়ে প্রতি পরিবারের প্রধানকে তাৎক্ষণিক ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সিনিয়র নেতা অধ্যাপক এম. শফি উল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী, যুবলীগ সহ-সভাপতি ক্যানো ওয়ান চাক, মৌজার হেডম্যান বাচিং চাক, প্রেসক্লাব সভাপতি শামীম ইকবাল চৌধুরী, যুগ্ন-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম কাজল, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক উবাচিং মারমা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাওলনা নুরুল আমিন সহ প্রমূখ। অর্থ প্রদানকালে অধ্যাপক এম. শফি উল্লাহ বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে অভিযানে নেমেছে আমার বিশ্বাস ওইসব সন্ত্রাসী রেহায় পাবেনা। যারা অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাস তারা কারো বন্ধু ও আত্মীয় হতে পারেনা। নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি-জুমখোলা-সোনাইছড়ি সড়কে ও সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাতগজ্জা পাড়ায় অর্ধশতাধিক ডাকাতের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মো. আলমগীর শেখ সাংবাদিককে জানান, কয়েকজন অস্ত্রধারী যুবক সড়কে পথযাত্রীদেরকে গতি রোধ করে টাকা পয়সা, মোবাইল চিনিয়ে নেয়। তবে ওই যুবকদেরকে ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এসব অভিযানে জনসাধারণের সহযোগিতার প্রয়োজন। শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আলী হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পাঠকের মতামত: